সুন্দরবনের মানুষ কেমন ?
ব্যবসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয় আর সেই সূত্রেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার শেষ প্রান্ত অর্থাৎ বাংলাদেশ বর্ডার যে জায়গাটার নাম হলো পাথরপ্রতিমার সত্যদাসপুর। লক্ষীকান্তপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বাসে করে প্রায় তিন ঘন্টার মত রাস্তা তার মধ্যে এক ঘন্টা চল্লিশ মিনিট বাসে এবং এক ঘন্টা কুড়ি মিনিট নৌকা বা লঞ্চে । লক্ষীকান্তপুর থেকে বাসে করে রামগঙ্গা সার্ভিস ঘাটে নেমে সেখান থেকে নৌকা বা লঞ্চে চড়ে যেতে হয় সত্যদাসপুর। প্রথম বছর যখন তাদের ডাক পেয়ে গিয়েছিলাম সত্যদাসপুর গ্রামে তখন ওখানকার মানুষ সম্পর্কে আমার ধারণাটা ছিল অন্যরকম কিন্তু তাদের সাথে মেশার পর বুঝতে পারলাম তারা কেমন মানুষ। মানুষগুলো দেখতে ভয়ংকর কিন্তু তাদের মন-মানসিকতা একেবারে মাটির মানুষকে কিভাবে ভালোবাসা দিতে হয় এবং তাদের সাথে কিভাবে চলাফেরা করতে হয় একমাত্র তারাই জানে যদিও প্রথমে দেখে অনেকটা ভয় পেয়েছিলাম কিন্তু যখন দু চার ঘন্টা তাদের সাথে চলাফেরা করলাম তারপরে বুঝতে পারলাম মানুষগুলো কতটাই এস্নেহশীল এবং কতটা মিশুক।
কাজের সূত্রে দুদিন থাকতে হয়েছিল তাদের ওখানে অর্থাৎ সত্য দাসপুরে তারপর যখন পরের দিন বাড়ি ফিরব তখন সত্যি চোখের কণা থেকে যেন পানি চলে আসলো তাদের ব্যবহার দেখে। নদীর ধার থেকে কিছুটা ভেতরে এদের ঘরবাড়ি। তারপরেও আমার একার এগোতে এসেছে প্রায় কুড়ি থেকে ২৫ জন মোটর ভ্যান ভাড়া করে। কারণ নদীর ওপারে যানবাহন বলতে সাইকেল বাইক এবং মোটর ভ্যান এছাড়া অন্য কোন যানবাহন দেখতে পাওয়া যায় না। লঞ্চঘাটে এসে অনেকক্ষণ সবাই মিলে আড্ডা মারলাম তারপরে সময় হলো লঞ্চ আসার। লঞ্চ আসতেই যখন আমি লঞ্চে উঠলাম তখন সকলে লঞ্চে ঘাটে দাঁড়িয়ে এক ভাবেই তাকিয়ে আছে আমার দিকে যে ফটোটা এখন আপনারা পোস্ট এ দেখতে পাচ্ছেন। লঞ্চে উঠে আসার পর যখন লঞ্চ আবার চলতে শুরু করলো তাদের থেকে যত দূরে হচ্ছি চিল্লাচিল্লি বলতে চাইছে ভাই ভালো থেকো সুন্দর থেকো। এবং আগামী বছর আবার আমাদের এখানে আসতে হবে এইসব বিভিন্ন রকম কথাগুলো নদীতে ভেসে ভেসে আসছিল খুবই সুন্দর লাগছিল কথাগুলো এবং এই সময়টা মানুষের খুবই একটা স্মৃতি বলে মনে করি আমি কারণ তাদের যে ব্যবহার এবং তাদের চরিত্র মানুষের সাথে কিভাবে মিশতে হবে কিভাবে নতুন লোকদের আপন করতে হয় সমস্ত রকম বিষয় তারা খুব ভালোভাবেই জানে।
এই সুন্দরবনের মানুষ সারা বছরের মধ্যে এক থেকে দু মাস বাড়িতে থাকে আর বাকি সময়টা তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে কাজ কর্ম করে এবং তিন মাস চার মাস অন্তর বাড়িতে ফিরে শুধুমাত্র ছাড়া অন্য রকম কোন কাজকর্ম নেই যারা মৎস্যজীবী তারা বাড়িতে থাকে আর যারা বিভিন্ন রকম কর্ম বা কাজ করেন তারা কাজের সূত্রে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে কাজকর্ম করে বাড়িতে ফিরে তারপরেও অভাব অনটন এদের মধ্য থেকে যায় না কিন্তু যখন কোন নতুন মানুষ গ্রামে আসে তাদেরকে বুঝতেই দেয় না যে এরা অসহায় এটাই তো মানুষের পরিচয়।
ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য