খুবই সুন্দর একটি ছোট্ট ভালোবাসার গল্প
কাঁচরাপাড়া স্টেশন নাম শুনলেই মনে হয় একটা চেনা চেনা ভাব কারণ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বা বিধানসভা নির্বাচনে আমরা অনেক খবর দেখেছিলাম এই কাঁচরাপাড়া হালিশহর কাচিয়ারা এইসব রেলওয়ে স্টেশন সম্পর্কে কারণ যখনই ভোট হয়েছিল তখন বর্তমান শাসক দলকে নিয়ে বিভিন্ন রকম সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দেখেছিলাম বিভিন্ন রকম খবরাখবর যার মধ্যে ট্রেন অবরোধ এবং বোমা হামলা উল্লেখযোগ্য যাইহোক সেদিকে আমার বলা বক্তব্য নয় আমি আপনাদের কাছে এই কাজিয়ারা রেলওয়ে স্টেশনের একটি ছোট্ট গল্প তুলে ধরব আশা করি সকলের ভাল লাগবে।
কোন একটা কাজের জন্য কিছুদিন আগে যেতে হয়েছিল এই কাঁচরাপাড়া স্টেশনে । শিয়ালদহ থেকে কল্যাণী সীমান্ত লোকাল ট্রেনে উঠে গিয়েছিলাম এই কাঁচরাপাড়া স্টেশনে ট্রেনে করতে যাওয়ার সময় অবশ্যই ট্রেনটা ছেড়ে যাওয়ার পথে অবশ্যই ট্রেনটা পেয়েছিলাম আর প্রথমত ভেবেছিলাম হয়তো কোন সিট পাবো কিনা তাই নিজেকে অনেক কষ্ট করে ট্রেনটা ধরতে হয়েছিল তারপরে ওটাই জানলার এক সাইডে একটা জায়গা পেয়েছিলাম যার অপজিট সাইডে বসা একটি ১৫ থেকে ১৬ বছরের যুবতী মেয়ে সম্ভবত স্কুলেই পড়ে। অনেক সেজেগুজে কোথায় যেন একটা যাচ্ছে অবশ্যই কিছু দূর যাবার পর যখন ট্রেনটা দমদম ক্রস করে গেল তখন দেখতে পেলাম স্মার্ট ফোন নিয়ে কোথায় যেন ফোন করছে অবশ্যই যেভাবে কথা বলছে তাতে আর বুঝতে বাকি থাকলো না যে মেয়েটা তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছে। আমি নিজেকে যতই তার দিক থেকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু তার ভাব ভঙ্গিমা এমনই ছিল তার দিকে অবশ্যই দেখতেই হচ্ছিল মাঝে মাঝে। কারণ তার কথা তার যে ভঙ্গিমা হাসি ঠাট্টা এইসব দেখে শুধুমাত্র আমিই কেন কম্পার্টমেন্টে থাকা আরো অনেকেই মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ছিল। যত স্টেশন যাচ্ছে মেয়েটা আস্তে আস্তে ততটাই মন খারাপ করতে থাকছে। অবশ্যই কথাগুলো যদিও কেউ শুনতে পাচ্ছে না কারণ মেয়েটির কানে ছিল হেডফোন আর সেই হেডফোন হাতে নিয়ে খুবই আস্তে আস্তে কথাগুলো বলছিল ওপর পারে ছিলাম আমি, কিছু বুঝতে পারিনি আর তেমন কিছু বোঝার চেষ্টাও করিনি তবে আরো কিছুক্ষণ যাবার পর মেয়েটার চোখ থেকে অঝোরে বয়ে আসছে চোখের পানি তখন খুবই অবাক লাগলো ভাবলাম এই তো মেয়েটা এক্ষুনি খুবই হাসি ঠাট্টা এবং আনন্দের মধ্যে ছিল জানিনা কি হলো এর মধ্যেই মেয়েটার চোখ থেকে অঝোরে পানি ঝরে যাচ্ছে।
ভালোবাসা মানে শুধু কি ভুল বোঝাবুঝি ?
এইসব কথা ভাবতে ভাবতে, এরই মধ্যে আরো কয়েকটি স্টেশন পার হয়ে গেল তার মধ্যে মেয়েটি শেষের দিকে যে কথাগুলো বলছিল তার মধ্যে দুই একটা কথা একটু স্পষ্ট বুঝতে পারলাম আর সেই বোঝার মধ্য থেকে কয়েকটি কথা হলো এই যে "ভালো শুধু আমি একাই বেসেছি তুমি কোনদিনও আমায় ভালবাসনি তাই এতটাই দুঃখ আমায় দিতে পারছ" সত্যি কথাগুলো শুনে নিজের কাছে নিজেকে অনেক কষ্টবোধ হল আজও এইরকমই প্রেমিক প্রেমিকা আছে যারা প্রেমের টানে কোথা থেকে কোথায় ছুটে যায় এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে আরেকটু কথা জানা গেল ছেলেটাকে বারবার দেখা করতে আসার কথা বললেও দেখা করতে আসে না তাই মেয়েটা দেখা করতে যাচ্ছে ছেলেটার বাড়ির কাছাকাছি তাই এরকমই একটা কথা বলল।
এরই মধ্যে ট্রেনটি প্রায় হালিশহর ছাড়িয়ে কাঁচরাপাড়া গেট ছেড়ে যাচ্ছে আমি নামার উদ্দেশ্যে অবশ্যই একটু গেটের দিকে আগিয়ে আসছিলাম দেখলাম মেয়েটিও আমার পেছন পেছন আগিয়ে আসছে নামার জন্য অবশ্যই বুঝতে পারলাম মেয়েটিও কাঁচরাপাড়া স্টেশনে নামবে তারপর যখন কাঁচরাপাড়া স্টেশন আসলো অবশ্যই আমি নামলাম আর মেয়েটাও নামল। তারপর নিজের কাজের দিকে রওনা দিলাম।
এ কেমন ভালোবাসা ?
কাঁচরাপাড়া স্টেশন থেকে মিনিট পাঁচেকের রাস্তা যেখানে আমার ছিল কাজ সেখানে গিয়ে কাজ মিটিয়ে অবশ্যই ট্রেন ধরার জন্য স্টেশনের দিকে যখন হেঁটে হেঁটে আসতে শুরু করলাম কিছুটা আসার পর একটা জায়গায় দেখলাম অনেকগুলো মানুষ একজনকে ঘিরে কি যেন দেখছে অবশ্যই নিজের মধ্যে একটু কৌতূহল হল এতগুলো মানুষ এক জায়গায় জড়ো হয়ে কি করছে? একটু দেখা যাক। এগিয়ে যেতে দেখলাম যে মেয়েটির সাথে আমি শিয়ালদা থেকে ট্রেনে উঠে কাঁচরাপাড়াতে এসেছিলাম সেই মেয়েটি যেন মাটিতে পড়ে লুটোপাটি খাচ্ছে এবং চিৎকার দিয়ে কান্নাকাটি করছে, মানুষের কাছে শুনলাম আসল ব্যাপারটা কি? তারা আমাকে বলল মেয়েটা একটা ছেলেকে ভালোবাসে আর সেই ছেলেটা কিছুক্ষণ আগে ট্রেনে কেটে মারা গেছে তাই মেয়েটা এত কান্নাকাটি করছে অবশ্যই ছেলেটার লাশ আমি রেললাইনের আশেপাশে কোথাও দেখতে পাইনি বা তখন মানুষকে জিজ্ঞাসা করার কোন ধারণা হয়নি সত্যি কথা বলতে শুধু ভাবছিলাম যে আজও প্রেম এরকমই অমর হয়ে আছে। কোথায় মেয়েটা বলেছিল আমি একা তোমাকে ভালোবাসি আর সেখানে ছেলেটা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রাণ হারালো বোঝার বিষয় এটাই সত্যিই কি মেয়েটা একা ভালবাসত না সমপরিমাণে ভালোবাসতো ছেলেটাও। প্রেমে ছোটখাটো রাগারাগি ভুল ক্রটি হয়েই থাকে কিন্তু অবশ্যই দুজনকে মানিয়ে নিতে হয়।
ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য